প্রকাশ :
২৪খবর বিডি: 'চার মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সকালে ত্রাণের চিড়া-গুড় খেয়েছিলেন সুনামগঞ্জ শহরতলির হাছনবসত গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ আলী। কিন্তু ছয়টি গরু ও দুটি বাছুরকে কিছুই খেতে দিতে না পারায় মনোকষ্টে ভুগছিলেন তাঁরা। ইউসুফ সকালে গরুর খাবারের সন্ধানে বের হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত না ফেরায় পথে বেঁধে রাখা গরুর পাশে দাঁড়িয়ে হা-হুতাশ করছিলেন তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম। স্বামীকে দেখেই তার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। ইউসুফের উত্তর, 'কী করব, অনেকের কাছে হাত পাতছি গরুর খাবারের টাহার লাগি, পাইলাম না।'
'এই দম্পতির মতোই শহরতলির কালীপুর ও হাছনবসত গ্রামের অন্তত ৫০০ পরিবার এখন নিজেদের খাবারের পাশাপাশি গোখাদ্যের জন্যও মানুষের কাছে হাত পাতছেন। বস্তুত, জেলাজুড়েই এখন পশুদের চরম দুঃসময়।'
-পাশে দাঁড়ানো জালাল উদ্দিনের বড় ভাই আলা উদ্দিন বলেন, ত্রাণের কিছু চাল-ডাল পাওয়ায় কোনো রকমে আমাদের জীবন রক্ষা হচ্ছে। গরুগুলোর মুখের দিকে তাকালে বড় বেশি কষ্ট হয়, ওরা আমাদের দিকে চেয়ে থাকে। কিচ্ছু করতে পারছি না।
'সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার বাসিন্দা কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল বাশার ঠাকুর খান বলেন, জেলার দুই হাজার ৮৮৭ গ্রামের মধ্যে অন্তত দুই হাজারটিই বন্যায় ডুবেছে। একটি গ্রামে চারশ গরু থাকলেও জেলাজুড়ে আট লাখ গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।বাজারে গোখাদ্য হিসেবে পরিচিত ভুসির দাম ৫০ কেজির বস্তা ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৯৫০ টাকা হয়েছে। খড় ও কুঁড়া পাওয়াই যাচ্ছে না। এ অবস্থায় গরু নিয়ে বিপন্ন কয়েক লাখ পরিবার।'
গবাদি পশুর দুঃসময়,গরু নিয়ে বিপাকে কৃষক
'জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান গতকাল বুধবার দাবি করেন, বন্যার সময় প্রত্যেক উপজেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের দিয়ে একটি করে মেডিকেল টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মাঠে কাজ করছেন। তাঁদের কাছে আজকালের মধ্যেই ৬৮ হাজার ৫০০ কেজি পশুখাদ্য পৌঁছাবে। তাঁরা দ্রুত সেগুলো উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছাবেন।'
-তিনি জানান, শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জে ৪২২টি গরু, ৩৭ মহিষসহ তিন লাখ ৮৭ হাজার ৫২৮ গৃহপালিত প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে।